সম্প্রতি শেষ হওয়া ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোতে পাটের তৈরি একটি সাইকেল দেখতে প্রদর্শন করা হয়েছিল। এটি দেখতে রীতিমতো ভিড় ছিল। সাইকেলট উদ্ভাবন করেছেন মোহাম্মদ আবু নোমান সৈকত। যিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। নোমান সৈকত দাবি করেন তার উদ্ভাবিত সাইকেল এতই টেকসই যে কমছে কম ৫০ বছর টিকবে।
পাট দিয়ে সাইকেল তৈরির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইসাইকেল নিয়ে গত ছয় বছর যাবৎ কাজ করছি। যখন এই বাইসাইকেল বানানোর কাজে আসি, তখন হালকা ম্যাটেরিয়াল খুঁজতে খুঁজতে প্রথমে কার্বন ফাইবার সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু, কার্বন ফাইবারের দাম অনেক, তাই চিন্তা করলাম আমার আশেপাশের কোন ফাইবার নিয়ে কাজ করা যায় কিনা। সেখান থেকে আসলে পাটের আঁশ নিয়ে কাজ করা।’
২০০৯ সালে ঢাকা পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করেন নোমান সৈকত। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৪ সালে শুরু করেন নিজের সাইকেল তৈরির কারখানা। গ্রাহকদের চাহিদা মতো পছন্দের ডিজাইনের বাইসাইকেল তৈরি করে দেন তিনি। ২০১৫ সালে পাটের বাইসাইকেল বানানোর কাজ শুরু করেন তিনি।
সাইকেলের ফ্রেম বানাতে হালকা এবং টেকসই বস্তু খুঁজতে গিয়ে পাটের আঁশ দিয়ে বাইসাইকেল বানানোর ধারণাটা মাথায় আসে তার। চার বছরের চেষ্টায় সফল হন তিনি। সৈকত জানান, ‘শুরুটা অনেক কঠিন ছিলো, ঘনত্ব কি রকম হবে, কোন আঁশটা আমি ব্যবহার করবো, হবে কিনা, কাগজে-কলমে জানতাম যে হবে, কিন্তু করার সময় আমি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না।’
বাইসাইকেল তৈরির পদ্ধতির ব্যাপারে সৈকত বলেন, ‘অনেক শক্ত পাটের তৈরি পাইপ যা দিয়ে আমি বাইসাইকেল বানাই। একটা স্টিলের পাইপের উপরে পাটের কাপড় প্যাচানো হয় রেজিন আঠা সঙ্গে দিয়ে। শুকানোর পরে এটাকে খোলা হলে একটা আকার চলে আসে। এরপর, এটাকে কেটে আপনার প্রয়োজন অনুসারে যেভাবে দরকার ব্যবহার করতে পারেন। আপাতত শুধু ফ্রেম পাট দিয়ে তৈরি করা। বানানোর পদ্ধতি যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে হ্যান্ডেলবার, ফর্ক, রিম, স্যাডেল, স্ট্যান্ড এগুলো পাট দিয়ে বানানো সম্ভব। তবে, বানানো সম্ভব না টায়ার, টিউব ও চেইন।’
সৈকত আরও বলেন, ‘আপাতত কোন মেশিন নাই, হাতেই বানাচ্ছি। একটা ফ্রেম যদি আমি ডিজাইন প্রসেস থেকে চিন্তা করি- ডিজাইন প্রসেস, জিনিসপত্র কেনা এসব মিলিয়ে এক সপ্তাহ তো লাগেই। আর, টেকসইয়ের কথা যদি বলতে চাই, ৫০ বছরেও কিছু হবে না। মানে একটা জেনারেশন চালাতে পারবে, কিছু হবে না।’
‘সাইকেলে ব্যবহৃত পাটের তৈরি পাইপ সহজে পচনশীল নয়। রেজিনের মিশ্রণ থাকায় এটি মাটির সঙ্গে মিশতে বেশি সময় নেয়। এটাকে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব বলা যাবে না। তবে, এক কেজি অ্যলুমিনিয়াম বা এক কেজি স্টিল তৈরি করতে প্রচুর পানি নষ্ট হয়, যেটা আর পরে ব্যবহারই করা যায় না। কার্বন ফাইবার দিয়ে জিনিস তৈরি করা তো পরের কথা। কার্বন ফাইবার তৈরি করতেই প্রচুর পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। সে জায়গা থেকে এটা বেশি পরিবেশ বান্ধব। তবে, পাটকে আমরা যতটা পচনশীল হিসেবে দেখি, এটা ঠিক ততটা না।’ বলছিলেন পাটের সাইকেলের উদ্ভাবক নোমান সৈকত।
একেকটি পাটের বাইসাইকেল বানাতে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে ১০ হাজার টাকায় তৈরি করা সম্ভব।