স্থপতি ফৌজিয়া ডেইজীর জন্ম ও বেড়ে উঠা খুলনা শহরে। ২০০৯ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদ থেকে পাশ করে স্বামীর সহযোগিতায় স্থাপত্য আর্কিটেক্টস নামে কনসালটেন্সি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৫ সাল পযর্ন্ত ভালোভাবে চালিয়ে নেন। সন্তান জন্মের পর ই-কমার্সের মাধ্যমে পুনরায় ক্যারিয়ার শুরু করেন। তার উদ্যোগের নাম অন্দর। তিনি মূলত মেয়েদের পোশাক ডিজাইন ও বিক্রি করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হলেন কিভাবে?
ফৌজিয়া ডেইজী: ঘটনা টা ২০১৫-২০১৬, মাতৃত্বকালীন জটিলতায় পুরো সময় টা বাসাতে থাকতে হতো। যদিও পেশায় আমি একজন স্থপতি, কিন্তু ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করাটা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। আর ক্যারিয়ার যখন নিভু নিভু আলোতে তখন মাথায় আসে ই-কর্মাস উদ্যোক্তা হওয়ার কথা। শীতের সময় ছিল তখন, মাত্র ১৫০০ টাকায় পাঁচ টা শাল এ ব্লক প্রিন্ট দিয়ে কাজ শুরু করি। এক ঘন্টার মধ্যে ২৫০০ টাকায় সেল করে আর থেমে থাকি নি। তারপর ১০ টা টাঙ্গাইল শাড়ি আনলাম ঢাকা থেকে বান্ধবীর সাহায্যে, পেজে দিলাম সাথে সাথে ই বিক্রি হয়ে গেলো। সেই থেকে আমার ই-কর্মাসের উদ্যোগ অন্দর এর পথ চলা।
টেকজুম: ক্যারিয়ারে ই-কমার্স নেওয়ার কারণ কি?
ফৌজিয়া ডেইজী: বাড়িতে বসে কাজ করতে পারাটাই একমাত্র কারণ। একজন মা হিসেবে সন্তানের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশী। তাকে যত্ন নেওয়ার মতো তেমন কেউ ছিলনা আমার পাশে, তাই নিজ হাতে সংসার, সন্তান সামলিয়ে বাইরের জগতে বা অফিসে সময় দেওয়া টা প্রায় অসম্ভব ছিলো। তাই ই-কমার্স বেছে নিলাম ক্যারিয়ারে।
টেকজুম: অন্দর নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
ফৌজিয়া ডেইজী: স্বপ্নটা অনেক বড়। খুলনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একটা শো রুম আছে। আমি হ্যান্ডলুম ও হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করি, ডিজাইনার পণ্য তৈরী করি। আমার অধিকাংশ ক্রেতা প্রবাসী বাঙালিরা। দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে প্রবাসী ক্রেতাদের মাঝে বিপুল চাহিদা তৈরী হয়েছে আমার পণ্যের। তাই স্বপ্ন দেখি বিদেশের মাটিতেও অন্দরের শো রুম থাকবে। ডিজাইনার হ্যান্ডপেইন্ট পন্য বলতেই অন্দর কে চিনবে সবাই।
টেকজুম: নারী হওয়ায় উদ্যোক্তার চ্যালেঞ্জ গুলো কি ছিলো?
ফৌজিয়া ডেইজী: নারী মানেই চলার পথে হাজারো বাধা। আর সে যদি হতে চায় উদ্যোক্তা, সেটা তো এক রূপকথার গল্পের মতো। আমি অতিক্রম করেছি সবার মতোই। আর্কিটেক্ট হয়ে কাপড় বিক্রেতা হবো! এ সূত্রে পরিবারের সম্মতি এখনো পাইনি। কিন্তু আমার স্বামী মানসিক ভাবে পূর্ণ সাপোর্ট দেয়। এই জন্য এতো দুর আসতে পেরেছি। যেসব উদ্যোক্তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকি তাদের জন্য এক জেলায় বসে অন্য জেলায় পণ্যের সোর্সিং ও পার্সেল ডেলিভারি বরাবর ই চ্যালেঞ্জিং।
টেকজুম: উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার ক্যারিয়ারে ভূমিকা রাখছে?
ফৌজিয়া ডেইজী: সবচেয়ে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ। ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ স্যারের নিরলস প্রচেষ্টায় উই আজকের অবস্থানে। সারাদেশ থেকে আমরা যারা দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করি বা করতে আগ্রহী স্যার সবাইকে উইয়ের মাধ্যমে ই–কমার্সে দক্ষ করে তোলছেন। ঢাকার বাইরে থেকেও আমাকে সমান প্রাধান্য দিয়ে, আমার পণ্যের প্রচার ও প্রসার করছেন। উইতে আমি যে পরিচিতি ও সুনাম পেয়েছি তা অন্দরকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কাছেও আমি চির কৃতজ্ঞ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা উদ্যোক্তাদের জন্য ফ্রি প্লাটফর্ম করে দিয়ে আমাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ই-কমার্স ভিত্তিক সুবিধা ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে চলেছেন।
টেকজুম: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফৌজিয়া ডেইজী: টেকজুম কেও ধন্যবাদ।