আপনি বসে আছেন, টেবিলের ওপর একটি মোবাইল রাখা। আপনার বন্ধু/বান্ধবী মোবাইল রেখে বাইরে গেছে। হঠাৎ আপনি শুনতে পেলেন তার মোবাইলে একটি মেসেজ এসেছে। স্ক্রিনে ভাসছে কে মেসেজ পাঠিয়েছে, কী মেসেজ পাঠিয়েছে।
এসব জায়গায় আমরা কী করি? কৌতুহল নিয়ে মোবাইলটি হাতে নেই, স্ক্রিনে মেসেজ পড়া গেলে মেসেজ পড়ি। আর মোবাইলটি পাসওয়ার্ড ছাড়া পেলে তো কথাই নেই! তার মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে সে কাকে মেসেজ করে, কী মেসেজ করে সব পড়ি।
আগেকার সময়ে কেউ কাউকে চিঠি পাঠালে এমন হতো। প্রাপকের হাতে চিঠি পাঠানোর আগে কৌতুহল নিয়ে অনেকেই চিঠি পড়ত। স্বামী স্ত্রীকে চিঠি লিখলে বা স্ত্রী স্বামীকে চিঠি লিখলে বাকিরা সুযোগ খুঁজত কীভাবে চিঠিটি পড়া যায়।
আর এখনকার যুগে মোবাইলের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ খোঁজে। কোনো সুযোগে যদি কারো মেসেঞ্জার পেয়ে যায়, তাহলে তো কথাই নেই! বন্ধুর মোবাইল চুরি করে মেসেজ পড়া হয়, বান্ধবীর মোবাইল চুরি করে মেসেজ পড়া হয়।
ইসলাম মানুষের প্রাইভেসিকে অনেক গুরুত্ব দেয়। আরেকজনের প্রাইভেসির জন্য হুমকি হতে পারে, এমন রাস্তা ইসলাম বন্ধ করে দিয়েছে। ইসলাম শক্তভাবে প্রাইভেসি লঙ্ঘনে সতর্কবার্তা জানিয়েছে। আপনি কারো ঘরে উঁকি মেরে দেখতে পারেন না— তারা ঘরে কী করছে। তেমনি কারো মোবাইলে কে কী মেসেজ পাঠিয়েছে সেটা নিয়ে কৌতুহলী হওয়ার কোনো কারণ নেই। আপনার বন্ধু/বান্ধবীর প্রাইভেসি লঙ্ঘনের অধিকার আপনার নেই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে উঁকি দেবে, তার জন্য ওই ব্যক্তির চোখ ফুঁড়ে দেয়া বৈধ।’ (মুসলিম: ২১৫৮)
মনে করুন, আপনার পাশে একজন মেসেজ টাইপ করছে। আপনি কী করছেন, আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছেন, সে কাকে কী মেসেজ দিচ্ছে সেটা দেখছেন। এর মাধ্যমে আপনি তার প্রাইভেসি বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। অন্যের অসাবধানতার কারণে হোক বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে, আপনি সাধারণত তার প্রাইভেসিতে আঘাত করতে পারবেন না। ইসলাম সাধারণত এমনটা অনুমোদন করে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকাল।’ (আবু দাউদ: ১৪৮৫)
আমাদের যুগে চিঠির ধারণা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেঞ্জার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যের অনুমতি না নিয়ে তার চিঠি যেমন পড়তে পারবেন না, তেমনি তার কোনো মেসেজ বা ডায়েরি পড়তে পারবেন না। একজন মানুষ যা একান্ত ব্যক্তিগতভাবে রেখেছে, সে চায় না আর কেউ তা দেখুক, তার অনুপস্থিতে আর কেউ সেটা দেখতে পারবেন না।
নিরাপত্তাজনিত কারণে, মামলার সাক্ষী-প্রমাণ সংক্রান্ত যেসব কারণে ইসলামের নিয়ম মেনে বিচারক এসব ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থে প্রাইভেসি লঙ্ঘন করতে পারেন। যেমনটা রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের পূর্বে হাতিব ইবনে আবু বালতাআ (রা.)-এর ক্ষেত্রে করেছিলেন।
কিন্তু সাধারণ নিয়ম হলো, আপনার ব্যক্তিগত কৌতুহল মেটানোর জন্য, অন্যকে নিয়ে মজা করার জন্য তার প্রাইভেসি লঙ্ঘন করতে পারবেন না। সে আপনার যতো ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোক না কেন। তার অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।