নতুন বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলো সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বেশকিছু বিষয় পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছেরর বাজেট প্রতিক্রিয়া জানায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চার শীর্ষ পর্যায়ের সংগঠন বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি এবং বাক্য।
সম্প্রতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্যে ঘোষিত বাজেট নিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠনগুলো। জোটবদ্ধভাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)।
সংবাদ সম্মেলনে বেসিসের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বিসিএস সভাপতি শাহীদ-উল-মুনির, আইএসপিএবি’র সভাপতি এম এ হাকিম, বাক্যে’র মহাসচিব তৌহিদ হোসেন উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়াও বেসিস থেকে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান, পরিচালক দিদারুল আলম, বিসিএস থেকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি ইউসুফ আলী শামীম, মহাসচিব মোশারফ হোসেন সুমন, কোষাধ্যক্ষ মো. জাবেদুর রহমান শাহীন এবং পরিচালক মো. আছাব উল্লাহ খান জুয়েল, আইএসপিএবি থেকে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব ইমদাদুল হক।
বেসিস সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন, আইসিটি খাতে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেটে বারাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ সর্বশেষ অর্থবছরের চেয়ে ২১৭৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, গতবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বরাদ্দ এ বছর ১৯৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের (Start-ups) জন্য সরকার ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, এই বাজেটে সরকার সোশ্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেসের উপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এর উপর ভ্যাট কমানো হয়েছে যা প্রশংসনীয়। এজন্য আমরা মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
কিন্তু একইসাথে ভার্চুয়াল বিজনেস তথা ডিজিটাল কমার্স এর উপর ভ্যাট ০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৫ শতাংশ হয়েছে যা বিকাশমান এই খাতের অগ্রগতির জন্য অন্তরায়। আমরা তাই বিকাশমান এই খাতের জন্য আগামী কয়েক অর্থ বছরের জন্য পুনরায় ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানাই।
বেসিস সভাপতি বলেন, আমরা সরকারের কাছে সামগ্রিক তথ্য প্রযুক্তি খাতের জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম। Outsourcing খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন বাবদ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর মাধ্যমে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এছাড়াও TA (Technical Assistance Project) এর জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব ছিল। আমরা সংশোধিত বাজেটে এই প্রস্তাবগুলো পুনরায় বিবেচনা করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
ITES (Information Technology Enabled Services) এর ওপর ৫% মূসক আরোপ করা হয়েছে। যা এ খাতের বিকাশের অন্তরায়। এ খাত থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ITES এর সংজ্ঞা পরিবর্ধনের দাবি জানাচ্ছি। এর সংজ্ঞায় System Integration,Platform as a service/Cloud service, Software as a service, Annual Software Maintenance Contacts (AMC), Information System/ Information technology/ CIS/ ID Assessment/ Audit Services, ICT related capacity building/ Skill development, IT Training, Cyber security Assessment, Internet Broadband Service (ISP), Computer Hardware এই সেবাসমূহ ITES এর সংজ্ঞার ভেতরে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের উপর মূসক অব্যহতি বহাল রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা অবশ্যই ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানী পর্যায়ে ৫% আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এবং সংশ্লিষ্ট যাবতীয় হার্ডওয়্যার সামগ্রীর উপর অতিরিক্ত করভার ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে বিবেচনায় নিয়ে ৫% আগাম কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।
পাশাপাশি,কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানী পরবর্তী পর্যায়ে সরবরাহ বা যেকোনভাবে সরবরাহ বা বিক্রির উপর প্রস্তাবিত বাজেটে মূসক ৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৭.৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বার্থে তা পূর্বের ন্যায় ৫% বহাল রাখা হোক।
আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তির প্রচার ও প্রসারের বিষয়ে অত্যন্ত তৎপর। এটি সুবিদিত যে, প্রতি ১,০০০ ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, প্রতি ১০% ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের মাধ্যমে ১.৩৮% জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটে।
এমন একটি অবস্থায় ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উপর ৫% রেগুলেটরি ডিউটি (RD) আরোপ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও প্রসারে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট জনমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে, যার প্রভাব সরকারী মেগা প্রজেক্টগুলোতেও পড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। উপরোক্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উপর ৫% রেগুলেটরি ডিউটি (RD) আরোপ করার বিষয়টি মওকুফ করে পূর্বের ন্যায় ০% করার জন্য আইএসপিএবি জোর দাবী জানাচ্ছে।
বাক্যে’র মহাসচিব জনাব তৌহিদ হোসেন বলেন, ITES এর সংজ্ঞায় BPO কথা উল্লেখ থাকলেও, BPO এর মধ্যে বিভিন্ন সেবা রয়েছে। তাই BPO এর সংজ্ঞা আরো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা জরুরি। পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার (ITES) ওপর আলোচ্য বাজেটে মূসক ৫% বলবত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার (ITES) ওপর থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাব করছি।