ফের খরচ বাড়ছে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে। এবার এই সেবার ওপর ৩ শতাংশ সম্পূরক কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা সরকারের পক্ষ থেকে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা, রেভেনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর দিতে হয় ২০ দশমিক ৪ টাকা। মানে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দেন ৫৪ দশমিক ৬ টাকা।
তবে এখন সম্পূরক শুল্ক যদি আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো হয় তাহলে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ কাটবে ২৯ দশমিক ৮ টাকা। রেভেনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স কাটবে ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর কাটবে ২০ দশমিক ৪ টাকা। ফলে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। এতে করে গ্রাহক ১০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন মাত্র ৪৪-৪৫ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দুটি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর ফলে মোবাইল ফোন সেবার ওপরে ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়বে।
সে হিসাবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকার ভ্যাট হিসেবে কেটে নেবে ৫৬ টাকা। এর মানে হলো- ভয়েস কলের সার্ভিস ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের ট্যাক্সসহ ৫৬ টাকার বেশি দিতে হবে। যা পূর্বের তুলনায় বেশি।
এখনো কল ড্রপ, কথা না বোঝা, পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক পরিষেবা না থাকার সমস্যা আমাদের দেশে রয়েছে। এরপরও সেবার মান না বাড়িয়ে নতুন করে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এটি সরকারের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। সাধারণ মানুষজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত গ্রাহকপর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ।
এদিকে এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে গ্রাহক পর্যায়েও শুরু হয়েছে নানান নেতিবাচক মন্তব্য। তারা বলছেন, দেশের প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় মোবাইল ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সেবার মান না বাড়িয়ে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মতো নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নতুন করে মোবাইল কলের ওপর বাড়তি ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শাকিল আহমেদ নামে এক গ্রাহক বলেন, এখনো কল ড্রপ, কথা না বোঝা, পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক পরিষেবা না থাকার সমস্যা আমাদের দেশে রয়েছে। এরপরও সেবার মান না বাড়িয়ে নতুন করে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এটি সরকারের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। সাধারণ মানুষজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত গ্রাহকপর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শিমু আক্তার নামে আরেক গ্রাহক বলেন, বাড়তি কলরেট গ্রাহকের জন্য গলার কাঁটা। এরপরও এখন যদি আরও ভ্যাট বসানো হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসা উচিত। কারণ, এমনিতেই মানুষজন বাড়তি কল রেটের ভয়ে ভয়েস কলের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এখন যদি আরও বাড়ানো হয় তাহলে সেটি সাধারণ গ্রাহকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ, সবসময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল অ্যাপস দিয়ে কথা বলার সুযোগ হয় না। আমরা মনে করি সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। একই সঙ্গে কলরেট কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এনবিআরের ওপর ফ্যাসিবাদ সরকারের আত্মা ভর করেছে। সেজন্যই নতুন করে গ্রাহকদের ওপর অনৈতিকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত
ভয়েস কল এবং ইন্টারনেট ডাটায় নতুন করে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এনবিআরের ওপর ফ্যাসিবাদ সরকারের আত্মা ভর করেছে। সেজন্যই নতুন করে গ্রাহকদের ওপর অনৈতিকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত একমাত্র তারাই নিতে পারে যাদের ওপর বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের ছায়া রয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবায় আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় তলানিতে আছি কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে। যেখানে দেশের এখনো ৪৮ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট সেবার বাইরে আছে সেখানে নতুন করে এই উচ্চ কর নাগরিকদের ইন্টারনেট সেবা থেকে বিমুখ করবে। এমন সিদ্ধান্ত নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করবে।
জনগণের পকেট কাটার জন্য এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছিল জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র ও সেবামূলক রাষ্ট্র গঠন করার জন্য। কিন্তু বর্তমান সরকার এবং এনবিআর সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ যোগানোর জন্য জনগণের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা হঠকারী, অযৌক্তিক এবং ফ্যাসিবাদী আচরণের অংশ। এমন সিদ্ধান্ত থেকে তাদের সরে আসতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে সরাসরি কাস্টমার ট্যাক্স হচ্ছে ৩৯ শতাংশ। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর মিলিয়ে আছে ৫৬ শতাংশ। এখন ১০০ টাকায় ৫৬ টাকা সরাসরি ট্যাক্স চলে যায়। এটা আরও তিন শতাংশ বাড়লে কাস্টমারদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
এছাড়া গত ৪ মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতির কারণে মোবাইলের অপারেটর কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা ও রেভিনিউ কমে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।