ট্রান্সফর্মিং লাইফ থ্রু ইনোভেশন স্লোগান নিয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হলো চার দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতভিত্তিক সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ১৬তম বেসিস সফটএক্সপো ২০২০। চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার ১৬তম বেসিস সফটএক্সপো’র উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি (অর্থ) ও বেসিস সফটএক্সপোর আহবায়ক মুশফিকুর রহমান এবং বেসিস সফটএক্সপো ২০২০’র প্লাটিনাম স্পন্সর ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড- ডিবিবিএল’র চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ, পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন ও পরিচালক দিদারুল আলম।
বেসিস সফট এক্সপো ২০২০ প্রসঙ্গে বেসিসের সভাপতি জনাব সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, দেশের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে বিদেশে অনেক বড়ো বড়ো প্রকল্পে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। সেজন্য দেশের সকল কাজ বিদেশিদের দিয়ে করা গেলেও তা স্থানীয় কোম্পানিদের দিয়েই বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
বেসিস সফটএক্সপো ২০২০ এর আহবায়ক এবং বেসিস-এর সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রদর্শনী এলাকাকে দশটি জোনে ভাগ করা হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ জোন এবং এক্সপেরিয়েন্স জোন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরবে। রয়েছে ভ্যাট জোন, ডিজিটাল এডুকেশন জোন, ফিনটেক জোন, উইমেন জোন এবং বরাবরের মতো রয়েছে সফটওয়্যার সেবা প্রদর্শনী জোন, উদ্ভাবনী মোবাইল সেবা জোন, ডিজিটাল কমার্স জোন, আইটিইএস ও বিপিও জোন। থাকবে ৩০টিরও বেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনার, যেখানে বক্তব্য রাখবেন শতাধিক দেশি-বিদেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।
ডিবিবিএল-এর চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ বলেন, স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিরলস অবদানের কারণেই। বেসিস সফটএক্সপো ২০২০-এ প্লাটিনাম পার্টনার হিসেবে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।
বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ । তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল গভর্ণেন্স বাস্তবায়ন, ২০ লক্ষ তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, ২০২৪ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করা এবং জিডিপিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ৫% অবদান রাখার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় শিল্পমন্ত্রী বলেন, বেসিসের এই আয়োজন সরকারের জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ তৈরির কাজে এগিয়ে যাবে। দেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে। বর্তমানে দেশের ৯৬% পরিবারে মোবাইল ব্যবহার করছে।
বাঙালীরা মেধাবী, বিশ্বের দরবারে বাঙালীরা তাদের মেধার পরিচয় রেখেছে। তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। আইটিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি হলে তা দিয়ে দেশের বাইরে জনশক্তি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন সম্ভব। আমাদের ভৌগলিক সুবিধা এবং তরুণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আউটসোর্সিংয়েও বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষত, ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর্পোরেট ট্যাক্স মওকুফ, সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানি আয়ে ১০% নগদ প্রণোদনার উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলেও আমি মনে করি।
তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব এখন এগিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, এবং তা বাস্তবায়ন করছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মেলাতে আমাদের তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে কারণ তারাই আমাদের স¤পদ। আমাদের মেধাবী তরুণরা বাহিরে কাজ করছে , যথাযথ সুযোগ তৈরি করতে পারলে এরা দেশেই কাজ করতে পারবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, স্থানীয় সফটওয়্যার অর্থাৎ মেইড ইন বাংলাদেশ ধারণাকে উৎসাহিত করতে হবে। সফটওয়্যার কো¤পানিগুলোকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে দাতা সংস্থার সহায়তার বাস্তবায়িত প্রকল্পে স্থানীয় সফটওয়্যার কো¤পানি গুলোকে সুযোগ দিতে হবে।
একইসঙ্গে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সরকারি ছোট বড় প্রকল্পে স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দিতে হবে, এ ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তির অপব্যবহার, সাইবার ক্রাইম বিষয়ে সকলকে কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে ও সচেতন হতে এই আয়োজন আমাদের সহযোগিতা করবে বলে আমি মনে করি।
এবারের বেসিস সফটএক্সপোতে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্যে থাকছে বি-টু-বি ম্যাচমেকিং সেশন, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নিজেদের খুব সহজেই ব্যবসার প্রসার করতে পারবেন। এ বছর সুইডেন, জাপান, নেদারল্যান্ডস থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশনে অংশ নেবে।
পাশাপাশি অন্য খাত থেকে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সফলভাবে বিটুবি সেশন স¤পন্ন করা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘বেসিস টপ টেন ডিজিটাল-রেডি কো¤পানিকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।
২০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যা¤প। রয়েছে ৪৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ইনোভেটিভ প্রজেক্ট শো-কেসিং, যাদের মধ্যে প্রথম তিনটি ইনোভেটিভ প্রজেক্টকে পুরস্কৃত করা হবে। থাকছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং কনফারেন্স। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সিএক্সও লিডারশীপ মিট। পাশাপাশি থাকছে মিউজিক্যাল কনসার্টও।
বেসিস সফটএক্সপোর পৃষ্ঠপোষক আছে- সিলভার স্পন্সর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড-ইউসিবিএল, ফিনটেক জোন পার্টনার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড-ইবিএল, এক্সিপেরিয়েন্স জোন পার্টনার-সফটফি টেক লিমিটেড, প্রজেক্ট শোকেসিং জোন পার্টনার আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আউটসোর্সিং কনফারেন্স পার্টনার ব্যাংক এশিয়া, পেওনিয়ার, ইন্টারনেট পার্টনার আমরা, লাইভ স্ট্রিমিং পার্টনার ঢাকা লাইভ । পাশাপাশি বেসিস সফটএক্সপো এর পার্টনার হিসেবে আছে আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা।
বেসিস সফটএক্সপোর লক্ষণীয় দিক-
* চারদিনব্যাপী আয়োজন ৬-৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
* উদ্বোধন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ আবদুল হামিদ
*স্থান: আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)
* ১০টি বিশেষ জোন
* ৩০০ টিরও বেশি দেশি-বিদেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের স্টল
*৩০টিরও বেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সেমিনার
*২০০০ বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যা¤প
*থাকছে ৪৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ইনোভেটিভ প্রজেক্ট শো-কেসিং
*বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং কনফারেন্স
*১০০ জনেরও বেশি দেশি-বিদেশি তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণ
*ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশন
* সুইডেন, জাপান, নেদারল্যান্ডস থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশনে অংশ নেবে
* শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সিএক্সও লিডারশীপ মিট
* থাকছে কনসার্টও।